তপন দেববর্মা।। যেকোনো দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন বলতে প্রত্যাশিত সামাজিক, অর্থনৈতিকও পরিবেশগত উন্নয়নকেই বুঝায়। তাছাড়া খেলাধূলা, শিল্প-কলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি সমৃদ্ধকরন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সু-স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ মৃত্যু হ্রাস, শিশু মৃত্যু হ্রাস, সুরক্ষিত স্যানিটেশন, শিক্ষা উন্নয়ন বাস্তবায়ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রমোট করে।
বিশ্বব্যাপী করোনা প্রকোপে এখন পর্যন্ত যেসকল অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপের মধ্যে রয়েছে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠি, খেটে খাওয়া দিন মজুর, চা- শ্রমিক তথা একটি উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্র ও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে অবস্থানকারীরা। যেখানে রাষ্ট্রীয় বিবেক এখনো এসকল জনগোষ্ঠির ভাগ্য নির্ধারনে হিমশিম খায়। এমনকি রাষ্ট্রীয় চতুর্থ স্তম্ভও এই সকল মানবিক অধিকারে পিছিয়ে থাকাদের পক্ষের বিস্তারে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই করে আসছে।
পুঁজিবাজার যদি তাৎক্ষণিক চিত্র ভাল ও মোক্ষম মাধ্যম ব্যবহার করে বানিজ্যায়ন দ্রুততায় চালাতে পারে, সেখানে আর্থিক অনটনে থাকা দরিদ্র ও সামাজিকভাবে টনাপোড়ন বা হেনস্থার শিকার জনগোষ্ঠিরা অসহায় হিসেবে নীরবেই দিনাতিপাত করে। দেখার কেউ নেই।
মহাবিশ্ব যুগপৎভাবে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের চমকে এগিয়ে চলছে; আর উন্নয়নের গতিতে অসহায়রা আরো পিছিয়ে পড়ছে নিদারুনভাবে। দরিদ্ররা কখনো নগরায়নের বিপক্ষে ছিলনা; শহর, বন্দর বা বাণিজ্যের অবকাঠামোর স্পর্শ খুঁজেনি ; প্রজন্মান্তরে তাঁরা সুখী- সমৃদ্ধ শক্ত ভিত্তির সামাজিক ব্যবস্থার স্বপ্নও বুনেনি, কেননা এই সকল সুদূর প্রসারী স্বপ্ন তাঁদের অধিকারে যেন নেই; শুধু কি আছে সামাজিক বন্ধনের অধিকার? তাঁদের প্রজন্মন্তারের অধিকারের দাবীগুলো পোষণ করবে আগন্তুক কোনো অসামান্য নেতৃত্ব! ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ইচ্ছা কিংবা সুক্ষ-সুক্ষ বাসনা পূরণ করেই জীবন বাজী রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় আদি পুরুষ থেকে আগামী পুরুষ পর্যন্ত দরিদ্রতাকে আলিঙ্গন করে।
আমরা বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠা নিয়ে চা শিল্পের ভূমি রক্ষা আন্দোলন দেখেছি ভারি ও অন্যান্য শিল্পের সাথে; স্থানীয় রাজনীতির অপরিপক্কতা ও অদূরদর্শীতার কালক্ষেপনে ঐ দৃশ্যের নেপথ্যে সংঘাতের সূত্র হিসেবে প্রতিফলিত হয়। বর্তমান সময়কার সরকার সে জন্য চা- শিল্পের ভূমির উপর শিল্প প্রতিষ্ঠানে পিছু হঠতে হয়েছে। এ- সমস্যা এখনো চলমান।
তবে দ্বিতীয় পরিকল্পনা ( পরিক্লপনা-খ) নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। চা শিল্পকে টেকসই আর্থ-সামাজিক আওতায় নিয়ে আসার দূরদর্শী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখনো সতেজ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এলাকার শিল্পবিষয়ক অদক্ষ শ্রেণীর শ্রমিকদেরকে দক্ষতার কর্মশালা পরবর্তী কার্যকরী মানব সম্পদে পরিনত করে অন্তত পরিবেশ বান্ধব গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করা যায় (ইহা একটি প্রস্তাবনা)। তাছাড়া শ্রম বন্টন হার ৬ অনুপাত ৪ করা গেলে সঠিক বাস্তবায়ন হবে বলে অনেকেই মত পোষণ করেন। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন শ্রমিকদের মধ্যে থেকে চা- শিল্পের ৬০ জনকে উল্লেখিত গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে। আর অন্যান্য অঞ্চল থেকে দক্ষ ৪০ জন শ্রমিক সরাসরি নিয়োজিত করা যেতে পারে।
যেহেতু চা শিল্পের ভূমির উপর উন্নয়ন কার্যকলাপের সিদ্ধান্ত সরকারের আছে , তাই চা শিল্পের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতা অবশ্যই চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বাস্তব রূপদান করতে হবে। পাশাপাশি চা শিল্পের আধুনিকায়ন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রনকারী মালিক ও ব্যবস্থাপনায় মানবিক জ্ঞান প্রসারকরন এবং নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বর্জন করলে চা শিল্পের সাথে অন্যান্য শিল্প তথা গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠার বৈধতা আইনত মর্যাদা পাবে।
আবাসন প্রকল্পের সঠিক নীতি দ্বারা, অর্থাৎ চা বাগান থেকে অন্তত ৬ কিলোমিটার দূরত্বে নির্মান বা বাস্তবায়ন হলে চা শিল্প এলাকার সাংস্কৃতিক বিকৃতির ও সমস্যার আভাস সেটা দূরিভূত হবে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহনে স্বচ্ছতা ও রাষ্ট্রীয় বিধি বিধান মেনে ভূমির মালিকানা হস্থান্তর হলে সেটি উভয় পক্ষের জন্যেই সঠিক বিবেচিত হবে। এতে করে বদলে যাবে চা জনগোষ্ঠীর আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থা । কারণ বহু বছর ধরে চলা দরিদ্রতা কেন্দ্রিক ঘূর্নায়মান জীবনচক্র থেকে বেরিয়ে সাধারন জীবনমান ফিরে পাবে চা জনগোষ্ঠি।
লেখক। সাবেক শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।