শুহিনুর খাদেম।। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। দীর্ঘ লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্ব ও আইসোলেশনের কারণে বিচ্ছিন্ন সময় কাটছে সবার। এতে করে সবার মাঝেই অবসাদ, মানসিক উদ্বিগ্নতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে, এমন সমস্যা পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি কানাডার এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। হটচিসিস ব্রেইন ইনস্টিটিউট’র সঙ্গে যৌথ ভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করে কালগ্যারি বিশ্ববিদ্যালয়। ফ্রন্টিয়ার’র এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ এইট্টিন।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট একাকীত্ব কোথাও না কোথাও অবসাদ, মানসিক উদ্বিগ্নতা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবসহ একাধিক সমস্যা তৈরি করেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, লকডাউন পরিস্থিতি বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টি নারী ও পুরুষের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানসিক উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা ও অবসাদসহ এ ধরনের একাধিক সমস্যায় পুরুষদের থেকে বেশি ভুগেছেন নারীরা।
লকডাউনের দিনগুলো নারী ও পুরুষদের মূলত ঘুম, মানসিক সুস্থতা, মানসিক স্থিতিশীলতাসহ এই জাতীয় কিছু বিষয়ের ওপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। লিঙ্গ ভেদে উপসর্গগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। কানাডার ৫৭৩ জন এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১১২ জন পুরুষ এবং ৪৫৯ ছিলেন নারী। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে ৭ জুনের মধ্যে এদের গড় বয়স ছিলো ২৫ বছর ৯ মাস।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, লকডাউনের সময়টায় অংশগ্রহণকারীদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ভুগেছেন। ৩৯ শতাংশের বেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ইনসোমনিয়ার উপসর্গ দেখা গেছে। অন্যদিকে, প্রায় সবাই মানসিক উদ্বিগ্নতা ও অবসাদের শিকার। একই সঙ্গে মানসিক সমস্যা বা গভীর অবসাদজনিত কিছু উপসর্গও ধরা পড়েছে।
ওই সমীক্ষায় আরো বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানসিক উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা ও অবসাদের শিকার হচ্ছেন নারীরা। যতো দিন যাচ্ছে ততো একাকীত্ব বাড়ছে। তাদের এমন উপসর্গ আরো খারাপ ও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই সংক্রমণকালে আইসোলেশন বা শারীরিক দূরত্বের জাঁতাকলে পড়ে এই ধরনের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে এমপ্যাথি বা সহমর্মিতা বোধের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। এই অধিক মাত্রার এমপ্যাথি মানসিক উদ্বিগ্নতা বা অবসাদের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এই গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ড. জিউসেপ্পে লারিয়া বলেন, বিষয়টি নতুন কিছু নয়। নারীরা বেশি আবেগপ্রবণ হন। তারা অত্যন্ত সংবেদনশীলও। সংসার, প্রিয়জন বা পরিবারের কোনো কঠিন সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বেশি চাপ নিতে হয়। প্রত্যেকের প্রতি যত্ন নেওয়া, পরিবারের প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে অতিরিক্তভাবে জড়িয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ভালোবাসা আর স্নেহের জেরে মহিলাদের মানসিক চাপ আর চিন্তাটাও ক্রমে বাড়তে থাকে। এর জেরে মানসিক অবসাদ বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
অনলাইন।