মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম।। কুয়াশা কেটে যাচ্ছে, প্রস্তুতি নিচ্ছি সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার। ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গণপাঠাগারে বিডিক্লিন চুনারুঘাট এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সেখানে যোগ দিলাম। এরপর রওনা হলাম রুবেল তালুকদার কে সাথে নিয়ে।
আমকান্দি গ্রামের বন চিরে একটি আলপথ পাকা হয়ে রাস্তায় পরিনত হয়ে খোয়াই নদীর স্লুইসগেইট পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। এই পথটি আমার খুব ভালো লাগে- নির্জন, কখনও কখনও নিঃসঙ্গ, একেবেঁকে যাওয়া এই পথের প্রান্তে হঠাৎ দাড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ এক ঝাঁক তালগাছ। স্লুইসগেট এর পাকা স্তরগুলোর মধ্যে কল কল-করে পানির ঝর্ণাটি আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় নায়েগ্রা জলপ্রপাত। যদিও এটি নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বিন্দুসম।
শুকনো মৌসুমে খোয়াইয়ের জল স্বচ্ছ ও শান্ত ভাবে বয়ে যায়। আশেপাশের গাছগাছালি ফাঁকে ফাঁকে নদীর ঝিকিমিকি বয়ে যাওয়া ভালই লাগছিল। হঠাৎ সমস্ত নির্জনতাকে-স্তব্ধতাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে বালু উত্তোলন কারী যন্ত্রের বিকট শব্দে।
ছবিঃ খোয়াই নদীতে বালু উত্তোলন।
উত্তর আমকান্দি, দক্ষিন আমকান্দি ও কাচুয়া গ্রামের আশেপাশে প্রচুর বালু উত্তোলনের যন্ত্র চলছে ক্লান্তিহীন। এক জায়গায় দেখলাম বোরো চাষের জন্য সেচ যন্ত্রটি বিকল হয়ে আছে, বেশ ক’জন সেই যন্ত্রটি সচল করার ব্যর্থ চেষ্টায় রত।
বালু উত্তোলনের যন্ত্রদের ক্লান্তি নেই বিরামহীনভাবে ভটভট-ঠাসঠাস শব্দে বীরদর্পে চালু আছে। আর কৃষকের আশার ও স্বপ্নের বিএডিসি সেচ যন্ত্রটি যেন অসহায়ের মতো-কৃষকের মতোই।
নদীর গর্ভ হতে এই যে বালু উত্তোলন হচ্ছে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কতইনা সচল করছে। সরকার বুঝেশুনে লিজ দিচ্ছে বেকার সমস্যা দূরীভূত হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী যন্ত্রের চাকার মতো অর্থনৈতিক চাকাও সচল আছে। চাকা আছে বলেই টাকা আছে।
ছবিঃ খোয়াই নদী।
আবার মাঝে মাঝে অবৈধ বালু উত্তোলনও হচ্ছে বোধ হয়। এতে খোয়াই নদী অত্যাচারিত হচ্ছে কি না? পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে কি না? শব্দ দূষণ হচ্ছে কি না ? প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে কি না? কে দেখবে এসব? সেই অমীয় বাণী কে শোনাবে?
খোয়াই নদীর বালুর খনি কি অনন্তকাল থাকবে? নদী কি মরে যায় না? ইতিহাস কি বলে?
ইতিহাস, সভ্যতা, পরিবেশ বড়ই হাস্যকর, যাদের কাছে নগদ পছন্দ। কাচুয়া গ্রামে সৈয়দ শামীম ভাইয়ের বাড়িতে গেলাম।
সায়েম তার জমি থেকে তিন তিনটে বড় লাউ উপহার দিল।
খোয়াই নদী মরে গেলে, শুষ্ক বালুময় হয়ে গেলে কিবা মরুভূমি হয়ে গেলে এই সাধের লাউ কি এতো সহজে পাওয়া যাবে?
লেখক। সহকারী অধ্যাপক
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ।